অনলাইন ডেস্ক : শরীয়তপুরে ছয় ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে স্কুলশিক্ষক দিলীপ কুমার মণ্ডলকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বুধবার (১৮ মে) উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসারের নির্দেশমতে অভিভাবকদের অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাওলানা শাহ আলম মিয়াকে প্রধান করে সহকারী শিক্ষক মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ইসমত আরা বেগম, রতন কুমার চক্রবর্তী ও মো. কামাল পারভেজকে সদস্য করে এ কমিটি করা হয়। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে (২০ মে) প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার থেকে ছয় ছাত্রীর অভিভাবক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত দিলীপ কুমার মণ্ডল গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক। তিনি উপজেলার মাছুয়াখালি এলাকার বাসিন্দা।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ এমদাদ হোসাইন জানান, বিদ্যালয়ের ছয় ছাত্রী শিক্ষক দিলীপ কুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে দু-তিন ধরে পরপর যৌন হয়রানির অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে। ক্লাসে পড়া না পারলে বা অন্য যেকোনো ওসিলায় শাসনের অজুহাতে ছাত্রীদের শরীরে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করেন। এ ছাড়াও অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী অভিযোগ করে, তাকে ওই শিক্ষক কুপ্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছেন। তাই বিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গোসাইরহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও ছাত্রীদের অভিভাবকরা অভিযোগ দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসারের নির্দেশমতো অভিভাবকদের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়ার পর ক্লাসসহ বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম থেকে শিক্ষক দিলীপকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীদের একজন জানায়, ওই শিক্ষক তাকে সোমবার (১৬ মে) দুপুরে তার বাসায় একা প্রাইভেট পড়তে যেতে বলেন। সে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি জোর করেন। একপর্যায়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন। ঘটনাটি খুলে বললে তার পরিবার বিষয়টি শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষককে জানায়।
ভুক্তভোগী আরও পাঁচ ছাত্রী জানায়, দিলীপ কুমার তাদের অনেককেই কুপ্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবে রাজি হলে পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেবেন বলেও জানান তিনি। ক্লাসে শাসনের ছলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করেন। তারা তার এমন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তার এমন আচরণে অনেকে ক্লাস ছেড়ে দিয়েছে। তারা এ রকম শিক্ষক চায় না। তারা চায় বাবার মতো শিক্ষক। যার কাছে তারা স্নেহ পাবে, আদর্শ শিক্ষা পাবে।
এদিকে অভিযোগের পর থেকে শিক্ষক দিলীপ কুমার মণ্ডল গা ঢাকা দিয়েছেন। তাকে মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায়নি। বাড়ি গেলে তার পরিবারের লোকজন দাবি করেন তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও তাদের অনুসারী এলাকার কিছু লোক তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার (সহকারী কমিশনার-ভূমি) সুজন দাস গুপ্ত বলেন, ‘আমি শিক্ষক দিলীপ কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় আমরা সচেষ্ট।
মতিহার বার্তা/এমআরটি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.